বিটুমিনের পেনিট্রেশন টেস্ট পূর্ণাঙ্গ তথ্য
পরিচিতি
বিটুমিনের পেনিট্রেশন টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা বিটুমিনের কঠোরতা বা নমনীয়তা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। রাস্তা নির্মাণ, ছাদ ঢালাই এবং অন্যান্য কনস্ট্রাকশন কাজে ব্যবহৃত বিটুমিনের মান যাচাই করতে এই পরীক্ষাটি করা হয়। নির্দিষ্ট ওজন, সময় এবং তাপমাত্রায় একটি সুচ বিটুমিনের মধ্যে কতটুকু প্রবেশ করতে পারে, তা পরিমাপ করাই এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
পরীক্ষার উদ্দেশ্য
- বিটুমিনের কঠোরতা বা নরমত্ব নির্ধারণ করা।
- বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সঠিক বিটুমিন গ্রেড নির্বাচন করা।
- বিটুমিনের তাপমাত্রা অনুযায়ী পরিবর্তনশীলতা পর্যবেক্ষণ করা।
- রাস্তার স্থায়িত্ব ও কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করা।
- বিটুমিনের মান ও নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা করা।
মূলতত্ত্ব
এই পরীক্ষায় একটি সুচকে বিটুমিনের নমুনায় নির্দিষ্ট লোড ও তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রবেশ করানো হয়। সুচ কতটুকু গভীরে প্রবেশ করেছে, তা মিলিমিটারের শতকরা অংশ (ডেসিমিলিমিটার) এককে প্রকাশ করা হয়। পেনিট্রেশন মান বেশি হলে বিটুমিন নরম এবং মান কম হলে বিটুমিন কঠিন বলে বিবেচিত হয়।
পরীক্ষার যন্ত্রপাতি
পেনিট্রেশন টেস্ট সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে নিম্নলিখিত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়:
- পেনিট্রেশন অ্যাপারাটাস – সুচ প্রবেশের গভীরতা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- পেনিট্রেশন সুচ – 1 mm ব্যাস বিশিষ্ট ধাতব সুচ।
- লোড – 100 গ্রাম ওজনের স্ট্যান্ডার্ড লোড।
- ঘড়ি বা টাইমার – 5 সেকেন্ড সময় নির্ধারণের জন্য।
- থার্মোমিটার – পরীক্ষার জন্য 25°C তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য।
- বিটুমিন নমুনা ধারক (ডিশ বা ক্যান) – বিটুমিন নমুনা সংরক্ষণের জন্য।
- পানির গোসল (Water Bath) – বিটুমিন নমুনার তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য।
পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে সেটআপ করার পদ্ধতি
সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে সেটআপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নলিখিত ধাপে ধাপে সেটআপ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত:
- পরীক্ষার স্থান প্রস্তুত করা – যন্ত্রপাতিগুলো ধুলাবালি মুক্ত এবং কম্পনমুক্ত সমতল স্থানে স্থাপন করতে হবে।
- পানির গোসল প্রস্তুত করা – পানির গোসলের তাপমাত্রা ২৫°C নির্ধারণ করে বিটুমিন নমুনাকে তাতে অন্তত ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা।
- পেনিট্রেশন অ্যাপারাটাস স্থাপন করা – যন্ত্রটিকে স্থির অবস্থায় স্থাপন করে সেটিংস চেক করা।
- সুচ সংযুক্ত করা – সূচকে পরিস্কার ও শুষ্ক করে যন্ত্রের উপরে সংযুক্ত করা।
- লোড প্রস্তুত করা – ১০০ গ্রাম লোড যথাস্থানে স্থাপন করা।
- থার্মোমিটার স্থাপন করা – নমুনার সঠিক তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে একটি থার্মোমিটার ব্যবহার করা।
- টাইমার প্রস্তুত করা – পরীক্ষার সময় ঠিকঠাক রাখতে টাইমার বা ঘড়ি সেট করা।
পরীক্ষা পদ্ধতি
নিচে ধাপে ধাপে পরীক্ষার পদ্ধতি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো:
- নমুনা প্রস্তুতি: বিটুমিন নমুনা গলিয়ে মসৃণভাবে একটি পরিষ্কার এবং শুকনো পাত্রে ঢালা হয় এবং ২৫°C তাপমাত্রায় রাখার জন্য পানির গোসলে রাখা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে নমুনা পরীক্ষা চলাকালীন নির্ধারিত তাপমাত্রায় থাকবে।
- পরীক্ষার যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করা: পেনিট্রেশন অ্যাপারাটাসটি একটি স্থিতিশীল ও কম্পন-মুক্ত টেবিলে স্থাপন করা হয়। সূচকে পরিস্কার ও শুকনো করে সেটআপ করা হয়। ১০০ গ্রাম লোড সঠিকভাবে সংযুক্ত করা হয়।
- নমুনা ধারকের স্থাপন: বিটুমিন নমুনা ধারণকারী পাত্রটি পেনিট্রেশন অ্যাপারাটাসের নিচে স্থাপন করা হয়, যাতে সুচ ঠিক কেন্দ্রে অবস্থান করে।
- পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি: পেনিট্রেশন সুচটি বিটুমিনের পৃষ্ঠে আলতোভাবে স্থাপন করা হয়, যাতে এটি কোনো অতিরিক্ত চাপ ছাড়াই বিটুমিনের সংস্পর্শে থাকে।
- লোড প্রয়োগ করা: ১০০ গ্রাম ওজন যুক্ত করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
- সময় গণনা: টাইমার চালু করে ৫ সেকেন্ড সময় নেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে সুচ স্বাভাবিক গতি অনুসারে বিটুমিনে প্রবেশ করে।
- গভীরতা পরিমাপ: পরীক্ষার শেষে, সুচ কতটুকু প্রবেশ করেছে তা পেনিট্রেশন অ্যাপারাটাসের স্কেলে ডেসিমিলিমিটারে রেকর্ড করা হয়।
- পুনরাবৃত্তি: একই নমুনায় পরীক্ষা কমপক্ষে তিনবার পুনরাবৃত্তি করা হয় এবং গড় মান নির্ধারণ করা হয়।
- ফলাফল মূল্যায়ন: পেনিট্রেশন মান নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকলে বিটুমিন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
অনুমোদিত মান (ছক আকারে)
বিটুমিনের গ্রেড |
পেনিট্রেশন মান (ডেসিমিলিমিটার) |
30/40 |
30 - 40 |
60/70 |
60 - 70 |
80/100 |
80 - 100 |
100/120 |
100 - 120 |
বিটুমিনের গ্রেড অনুযায়ী ব্যবহার
বিটুমিনের বিভিন্ন গ্রেড বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
- 30/40 গ্রেড: ভারী যান চলাচলের রাস্তা ও রানওয়ের জন্য উপযুক্ত।
- 60/70 গ্রেড: সাধারণ মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
- 80/100 গ্রেড: অপেক্ষাকৃত কম যানবাহন চলাচলের রাস্তার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- 100/120 গ্রেড: শীতপ্রধান এলাকায় রাস্তা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
পেনিট্রেশন টেস্ট বিটুমিনের মান যাচাই করার একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। রাস্তা নির্মাণে উপযুক্ত বিটুমিন নির্বাচন করতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিটুমিনের উপযোগিতা যাচাই করা হয় এবং প্রকল্পের স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
Post a Comment